নিজস্ব প্রতিবেদক
গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর থানাধীন এলাকায় একাধিক ভূমিদস্যদের দাপটে অতিষ্ঠ ওই এলাকার অসহায় দরিদ্র ভূমি মালিকরা।
সরে জমিনে দেখাও জানা গেছে, ওই এলাকার কয়েকজন ভূমিদস্যু মিলে নিরীহ একাধিক ব্যক্তির জমি ভুয়া দলিল সৃজন করে ভূমি দস্যুদের নামে করে নিয়েছে।
এমনই একটি ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী জানান, কাশিমপুর এলাকার বিভিন্ন জায়গায় কয়েকজন সক্রিয় ভুমি দস্যুরা মিলে বহু বছর ধরে নিরীহ মানুষের জমির ভুয়া দলিল বানিয়ে তাদের নামে করে দেশের অন্যান্য জেলার মানুষের কাছে বিক্রি করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
তারা আরও বলেন, (১)মুকুল, (২) মাহবুবুর রহমান, (৩) সাইজ উদ্দিন মোল্লা (সাবেক কাউন্সিলর ৩ নং ওয়ার্ড), (৪) ইদ্রিস মোল্লা, (৫) ইব্রাহিম সহ আরও অনেকেই বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে নিরীহ অসহায় মানুষের জমির ভুয়া দলিল সৃজন করে ওই নিরীহ মানুষদের জমি থেকে বেদখল দিয়ে আসছে এবং এসব জমি দেশের অন্যান্য জেলার মানুষের কাছে বিক্রি করে সৃজনকৃত দলিলের মাধ্যমে মালিকানা দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
এমন একটি ভুক্তভোগী অসহায় পরিবারের পক্ষ থেকে মোঃ হাবেল মিয়া জানান, বিগত ১৯৮০ সাল থেকে ভুয়া সৃজনকৃত দলিলের মাধ্যমে আমাদের কয়েক একর জমি দখল করে আসছে এই ভূমি দস্যুরা। এমতাবস্থায় (গাজীপুর) সিনিয়র সহকারী জজ ১ম আদালতে ২৯৪/২০২২ নং দেওয়ানি একটি মোকাদ্দমা দায়ের করি। পরে মাননীয় আদালত মোকদ্দামাটিতে উল্লেখিত জমির সমস্ত কাগজপত্র পর্যালোচনা ও তল্লাশি করে ২৫/০১/২০২৪ ইং তারিখে বিবাদী পক্ষের সৃজনকৃত (০২/০৫/১৯৮০ ইং তারিখে ৬৩৭১ নং) দলিলটি বাতিল বলিয়া গণ্য করেন, মোছাঃ শাহজাদী তাহমিদা (সিনিয়র সহকারী জজ ১ম আদালত গাজীপুর)।
পরে উক্ত আদেশ কপি নিয়ে আমাদের জমিতে আমাদের নামের সাইনবোর্ড দিলে রাতের আধারে বিবাদী পক্ষ ভূমি দস্যুরা সাইনবোর্ড ফেলে দেয় এবং বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে নানা ভাবে হুমকি প্রদান করেন। পরে স্থানীয় কাশিমপুর থানা একাধিকবার অভিযোগ করা হলেও কোন সুফল পায়নি। বরং কাশিমপুর থানার ওই সময়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসির মাধ্যমে হেনস্থার শিকার হয়েছি।
অবশেষে গত কয়েকদিন পূর্বে কাশিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি সারোয়ার জাহানের বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ প্রদান করেন বলে জানান ওই জমির মালিক মোঃ হাবেল মিয়া সহ অন্যরা।
মোঃ হাবেল মিয়া আরও বলেন, রবিবার (৭ জুলাই) সকালে আমাদের মালিকানাধীন বারেন্ডা মৌজাস্থিত সিএস ৪ নং, এস এ ৭৭ নং, আর এস ১৭ নং খতিয়ানভূক্ত সিএস ও এস এ ২৪৩ নং, আর এস ৯৩৮ ও ৯৪১ নং দাগ হতে চালা জমি ৯৪ শতাংশ জমির মধ্যে আর এস ৯৩৮ নং দাগে ১৮ শতাংশ জমিতে আমাদের নামের সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেই। পরে কাশিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সারোয়ার জাহান খবর দিলে খবর পেয়ে বেলা ১১ টার দিকে কাশিমপুর থানায় ওসি’র কক্ষে আমরা জমির মালিকরা উপস্থিত হলে কাশিমপুর থানার (ওসি) সারোয়ার জাহান বলেন, আজ যে জমিতে সাইনবোর্ড দিয়েছেন, সেই জমির সাইনবোর্ড খুলে ফেলার জন্য আপনাদের নামে কাশিমপুর থানায় অভিযোগ করেছেন।
যেহেতু উক্ত জমিটি আমার থানার আওতাধীন , সেহেতু আগামীকাল (৮ জুলাই) সোমবার রাত ৮ টার সময় জমির কাগজপত্র নিয়ে থানায় হাজির হবেন।
পরদিন সোমবার (৮ জুলাই) আমরা জমির মালিকানা দলিল ও মাননীয় আদালতের রায়ের কপি নিয়ে কাশিমপুর থানার (ওসি) সারোয়ার জাহানের কক্ষে উপস্থিত হই এবং মাননীয় আদালতের রায়ের কপি ওসি সাহেবের বরাবর প্রদান করি।
পরে কাশিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সারোয়ার জাহান, মাননীয় আদালতের রায়ের কপি দেখেন এবং থানায় উপস্থিত ভূমি দস্যু সাইজ উদ্দিন মোল্লা গংদের বলেন, মাননীয় আদালতের রায় নিয়ে মোঃ হাবেল মিয়া’রা তাদের মালিকানা জমি দখল বুঝে নিয়েছেন। গত ৭ মাস আগে মোঃ হাবেল মিয়াদের পক্ষে মাননীয় আদালত এই রায় প্রদান করেছেন। আপনারা গত সাত মাসের মধ্যেও আদালতে রিট দায়ের করেননি। যদি কখনও এই জমির মালিকানা আদালতের মাধ্যমে প্রমাণ করে রায় আনতে পারেন, তাহলেই এই জমির দাবি করতে পারবেন। অন্যথায় নিরীহ অসহায় মানুষ মোঃ হাবেল মিয়াদের জমিতে কোন প্রকার ঝামেলা করতে পারবেন না বলে ভূমি দস্যু সাইজ উদ্দিন মোল্লা গংদের বলেন।
পরে (ওসি) সারোয়ার জাহান সাইজ উদ্দিন মোল্লা গংদের তার কক্ষ থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। পরে ভূমি দস্যু সাইজ উদ্দিন মোল্লাসহ তার সহপাঠীরা মাথা নিচু করে থানা থেকে বেরিয়ে যায়।